মূল নিউজঃ চ্যানেল২৪বিডি
কৃষিক্ষেত্রে কৃষকের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা মূলধন বা পুঁজি। এর বাইরেও ব্যাংক ঋণ নেয়ার মতো যথেষ্ট কাগজপত্র ও জ্ঞান না থাকাও বড় একটি প্রতিবন্ধকতা। আবার কখনো মধ্যস্বত্বভোগী ব্যাপারিদের কাছে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় বরাবরই যেন লোকসানের সম্মুখীন হতে হয় কৃষকদের। এসব সমস্যা বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯২ সালে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের সেবায় আত্মপ্রকাশ করে বেসরকারি সংস্থা রোসা (ROSA)।
পরবর্তীতে বৃহৎ পরিসরে কৃষকদের সহায়তায় ২০১৫ সালে প্রজেক্ট ডিরেক্টর শেখ শরীফুল ইসলামের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে এনজিও রোসা’র আরেক সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘গ্রো-আপ’ (Grow Up)। ওই বছর থেকেই ‘গ্রো-আপ’ প্রত্যন্ত অঞ্চলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও যুব সমাজের সার্বিক সহায়তায় এলাকাভিত্তিক কৃষির উন্নয়নে মনোনিবেশ করে।
যার অংশ হিসেবে ‘গ্রো-আপ’ ডিজিটাল ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের কৃষকেরাও বর্তমানে অর্থনৈতিক সহায়তা ছাড়াও সঠিক স্যার-বীজ-কীটনাশকসহ প্রয়োজনীয় কৃষি শিক্ষা, অভিজ্ঞ কৃষিবিদের মাধ্যমে আধুনিক কৃষি শিক্ষার পাশাপাশি মধ্যস্বত্বভোগী ব্যাপারিদের এড়িয়ে সরাসরি কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারছেন। অপরদিকে, নানাভাবে উপার্জনের পথ খুঁজে বেড়ানো মানুষের পাশাপাশি নির্দিষ্ট আয় করা ক্ষুদ্র চাকরিজীবীরাও কৃষি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ এবং ঝুঁকিহীন খাত তৈরিতে অবদান রাখছেন।
গ্রো-আপের এমন উদ্যোগের ফলে বিনিয়োগকারী ও কৃষকদের মধ্যে যেমন সেতুবন্ধন তৈরি হচ্ছে, তেমনি ডিজিটাল বাংলাদেশকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে ভূমিকা রাখছে বেসরকারি সংস্থা রোসার প্রকল্পটি। গ্রো-আপ প্রকল্পের মাধ্যমে লাভবান হয়েছেন বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলার কৃষক ইয়াজ আলী। তিনি বলেন, আগেও গ্রো-আপ আমাদের কলা চাষে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছে। এবারও তারা আমার মতো কৃষকদের চিনিচাম্পা কলা চাষে সহায়তা করেছে।
এই কৃষক বলেন, আমি অত্যন্ত খুশি। এখন আর আমাদের আর্থিক বিষয় ছাড়াও সার, বীজ, কীটনাশক, কলার বাজার দর-এসব নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। গ্রো-আপ আমাদের নিশ্চিন্তে চাষের মাধ্যমে লাভের সুযোগ করে দিয়েছে।
জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলার আলু চাষি মোখলেছও একই কথা জানিয়েছেন। খুশিতে আত্মহারা এই কৃষক বলেন, চার মাস আগেও জমি বিক্রি করে আমার দেশের বাইরে যাওয়ার চিন্তা ছিল। কিন্তু গ্রো-আপের সহায়তায় এবার আশার চেয়েও বেশি ফলন হয়েছ। লাভও হয়েছে বেশ। এখন দেশে থেকে দেশের মাটিতে স্বর্ণ ফলাতে আগ্রহী। অন্যদিকে, গ্রো-আপের মাধ্যমে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়ে লাভবান হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চাকরিজীবী ইফতেখারের মতো অনেক মানুষ।
গ্রো-আপের সহকারী পরিচালক এজাজুর রহমান (সাধারণ পরিষদ সদস্য) জানান, বর্তমানে জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল ছাড়াও নাটোর রোড সংলগ্ন উপজেলা সিংড়া, বগুড়ার শিবগঞ্জের মোকমতলা, নওগাঁর পত্নীতলা, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল ও নাটোর উপজেলায় গ্রো-আপের মাধ্যমে সর্বমোট ১ হাজার ৮৮৭ জন কৃষক বিনিয়োগ পেয়েছেন। সেই সঙ্গে এলাকাভিত্তিক প্রান্তিক এই চাষিরা গ্রো-আপের মাধ্যমে চাষাবাদ করে বিভিন্নভাবে সফলতা অর্জন করছেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে গ্রো-আপের স্বপ্নদ্রষ্টা শেখ শরীফুল ইসলাম বলেন, একতাই বল। দেশের জিডিপির ১৯.১০ শতাংশ কৃষি থেকে আসে, কিন্তু গ্রো-আপের বিচক্ষণ টিম মনে করে, সকল বিনিয়োগকারী একত্রে কাজ করলে কৃষি ও কৃষকের সমন্বয়ে একাগ্রচিত্তে এটি ৩০ শতাংশে উন্নীত করা সম্ভব।
গ্রো-আপের সব বিনিয়োগকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যাপারিদের পেছনে ফেলে আমরা সবাই যদি কৃষি ও কৃষকের পাশে থাকতে পারি, তবে কৃষিতে বিপ্লব আসবেই ইনশাআল্লাহ। বিনিয়োগকারীর কষ্টে অর্জিত অর্থের সুরক্ষা শরীয়াহভিত্তিক মুরাবাহা চুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত করতে গ্রো-আপ বদ্ধপরিকর।